মোজাম্মেল হক:
নাটোরের লালপুর উপজেলার নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস জোনের আখক্ষেতে স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে মাঠের পর মাঠ আখগাছ মরে শুকিয়ে যাচ্ছে। ১০ হাজার একর আখক্ষেত জলাবদ্ধতার শিকার। এপর্যন্ত প্রায় আড়াই হাজার একর জমির আখ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। চলতি মৌসুমে আগাম বৃষ্টির কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন আখচাষী ও সুগার মিল কর্তৃপক্ষ।
নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল সূত্রে জানাগেছে, চলতি ২০১৯-২০ আখচাষ মৌসুমে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল এলাকায় ২৬ হাজার ৫০ একর জমিতে আখচাষ করা হয়েছে। ২০১৯-২০ আখ মাড়াই মৌসুম দীর্ঘায়িত হওয়ায় মুড়ি আখের আবাদ বিলম্বিত হয়। আবার অনেকেই দেরিতে আখরোপন করেছেন। ওইসব আখই জলাবদ্ধতায় বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মে মাসের শুরু থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। মিলের নিজস্ব বৃষ্টিপাত পরিমাপক যন্ত্রের হিসেবে মে মাসের সবচেয়ে বেশী বৃষ্টি হয়েছে ২০ মে। আম্পান ঝড়ের সাথে ওই একদিনেই বৃষ্টির পরিমান ছিল ১২১.৬৬ মিলি মিটার (৪.৭৯ ইঞ্চি)। ফলে ওই দিনই অধিকাংশ নিচু জমির আখ জলমগ্ন হয়ে পড়ে। এরপর থেকে বৃষ্টি নামতেই আছে। শনিবার পর্যন্ত বৃষ্টির পরিমান ছিল ১০৯৬.৪২ মিলি মিটার (৪৩.১৫ ইঞ্চি)। ফলে একের পর এক আখের জমি জলমগ্ন হয়ে পড়ছে।
মিলের মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) মনজুরুল হক জানান, ১০ হাজার একর জমির আখ বর্তমানে জলাবদ্ধতার শিকার। এর মধ্যে ২ হাজার ৩শ ৫৪ একর জমির আখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশন না হলে ক্ষতির পরিমান আরো বাড়তে পারে।
সাদিপুর গ্রামের জুয়েল, ফরিদপুর গ্রামের আশরাফুল ও আকরাম আলী জানান, জলাবদ্ধতার কারণে তাদের প্রায় ৫ বিঘা জমির সব আখ সম্পুর্ন নষ্ট হয়ে গেছে। বৈদ্যনাথপুর গ্রামের আখচাষী কৃষক লীগ নেতা মুজিবুর রহমান জানালেন, তার এলাকার মাঠের অধিকাংশ আখ ক্ষেতই এখন পানির নিচে। যে সব আখ গাছের মাজ (মাথা) পর্যন্ত পানি উঠেছে তার সবই মরে যাচ্ছে।
আখচাষী নেতা আনছার আলী দুলাল বলেন, জলাবদ্ধতায় মাঠের পর মাঠ আখ মরে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত আখচাষে চাষিদের অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে। অনেক প্রান্তিক চাষী নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল থেকে ঋণ নিয়ে আখচাষ করেছেন ক্ষেতের আখ নষ্ট হয়ে গেলে তাদেরকে না খেয়ে মরতে হবে।
নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, আখ উৎপাদনের ক্ষেত্রে এ মিলের প্রধান সমস্যা হলো জলাবদ্ধতা। এবছর প্রায় ১০ হাজার একর আখের জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। মিল জোনের বিভিন্ন খাল পুণ:খনন ও সংস্কারের মাধ্যমে জলাবদ্ধতার হাত থেকে আখক্ষেত রক্ষা করতে পারলে একর প্রতি ফলন বৃদ্ধি পাবে। এতে চাষিরাও লাভবান হবেন। আবার মিলও লক্ষমাত্রা অনুযায়ী গুণগতমান সম্মত আখ মাড়াই ও রিকোভারী বৃদ্ধির মাধ্যমে লাভবান হবে। তিনি জলাবদ্ধতা দূরিকরণের জন্য সরকারের সংস্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সুদৃষ্টি কামনা করেন।