সংবাদদাতা :
রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে ডেঙ্গু। এখন প্রতিটি ঘরে পাওয়া যাচ্ছে ডেঙ্গু রোগী। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা ডেঙ্গুর হটস্পটে পরিণত হয়েছে। এর পরই আছে চট্টগ্রাম, তারপর সিলেট। সবচেয়ে ভয়াবহ তথ্য হলো, ৬৪ জেলাতেই ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে। সারা দেশে আক্রান্তের সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুর হারও
গতকাল বুধবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১৯ জন। যা এ যাবৎ কালের সর্বোচ্চ মৃত্যু। ডেঙ্গুর এই ভয়াবহ প্রকোপের মধ্যে এডিস মশা নিধনের বড় কোনো পরিকল্পনা দেখা যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সব মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত পদক্ষেপ ছাড়া এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ মিলবে না
গতকাল সকাল পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ১৮ হাজার ৯৫০ জন। এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১৪৬ জন। আর খোদ রাজধানী ঢাকায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৬ হাজার ৩৯৮। এছাড়া চট্টগ্রামে ২ হাজার ৯৮৮ জন, বরিশালে ২ হাজার ৭৫ জন আক্রান্ত হয়েছে। আর রাজধানীতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১১৩। এই সময়ে চট্টগ্রামে মৃত্যু হয়েছে ১৯ জনের। বরিশালে মৃত্যু ২ জনের
সারা দেশে ডেঙ্গুতে যে পরিমাণ লোক আক্রান্ত হয়েছে, তার মধ্যে তিন গুণ রাজধানী ঢাকায়। মশা নিধন করতে ব্যর্থ হওয়ায় ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। কারণ বছরব্যাপী মশা নিধনের কার্যক্রম গ্রহণ করা না হলে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বাড়তেই থাকবে। কারণ যে পরিমাণ মশা নিধন করা হয়, তার তিন গুণ মশা জন্ম নিচ্ছে। এজন্য আধুনিক পদ্ধতি গ্রহণের পাশাপাশি আন্তঃমন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় করে মশা নিধনের কর্মসূচি গ্রহণ করলেই সুফল পাওয়া যাবে বলে মনে করেন কীটতত্ত্ববিদেরা। এছাড়া প্রতিষ্ঠানভিত্তিক মশা নিধন কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়কে এর আওতাভুক্ত করতে হবে, যাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মশার বংশবিস্তার হলে তা নিজ উদ্যোগে নিধন করা সম্ভব হয়।
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ঢিলেঢালা কর্মসূচি নিয়ে মশা নিধন করা যাবে না। কারণ নিধনের চেয়ে প্রতিদিন তিন গুণ মশা বংশবিস্তার করছে। বছরব্যাপী ৩৬৫ দিনই মশা নিধনের কর্মসূচি নিতে হবে। তাহলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত অনেকের কিডনি ও লিভার আক্রান্ত হয়। এজন্য উপসর্গ অনুযায়ী তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা দরকার।কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. নিজামউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত অনেকের কিডনি ও লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ কারণে কিডনি ও লিভার ঠিক আছে কিনা, সে বিষয়ে পরীক্ষা করা দরকার, যাতে ঝুঁকি এড়ানো যায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ ) ডা. নাজমুল হক বলেন, ঢাকাসহ তিনটি শহরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। এসব শহরে মশা নিধন কার্যক্রম সফল করা গেলেই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসত। আর এজন্য ব্যাপক হারে মশা নিধন কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।
চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. এম এন হুদা বলেন, হেমোরজিক ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের চুলকানি বেশি হয়। যাদের আগে থেকে অ্যালার্জি রয়েছে, তাদের অবস্থা অনেক সময় খারাপ হয়ে যায়। এর জন্য অলিভ অয়েল ব্যবহার করা ভালো। খাবার খাওয়ার ব্যাপারেও সতর্ক থাকা উচিত। আর সুতি কাপড় ব্যবহার করতে হবে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, গত বছরের চেয়ে এ বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি। মশা নিধন করতে হলে স্বাস্থ্য সেক্টরকে জরুরি সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। চিকিৎসাসেবাকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে, যাতে করে প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এতে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বাড়ছে প্রতিদিন। ফলে শয্যার সংকট দেখা দিয়েছে। আইসিইউর প্রয়োজনীয় সেই বেডও দেওয়া যাচ্ছে না। এতে করে ডেঙ্গু রোগের পাশাপাশি অন্যান্য রোগের চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। জেলায় আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা যেন সেখানেই দেওয়া সম্ভব হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এতে ঢাকার হাসপাতালে চাপ কমবে এবং রোগীরা চিকিৎসা পাবে।