পদ্মাপ্রবাহ ডেস্ক/
করোনার ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয়েছে। স্থবির পৃথিবী নড়েচড়ে বসেছে। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। শিগগিরই কী বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরবে? এ বিষয়ে খোলা কাগজের সঙ্গে কথা বলেছেন বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক জাফর আহমদ।
করোনার টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। আমাদের রপ্তানি বাণিজ্য ও বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে যে স্থবিরতা চলছে সেখানে ইতিবাচক পরিবর্তন শুরু হবে?
টিকার প্রভাব অর্থনীতিতে আসতে সময় লাগবে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যেটা বলে থাকেন তা হলো ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ লোক টিকা নিতে পারলে হার্ড ইমিউনিটি চলে আসতে পারে। হার্ড ইমিউনিটি আসলে লোকজনদের মধ্যে সেই আস্থা ফিরে আসবে যে, আমি বাইরে বের হই, কেনা-কাটা করতে বের হই, আন্তর্জাতিকভাবে যাতায়াত করি, জনসমাগম করি, লোকজনকে দাওয়াত দিই তাহলে করোনার সংক্রমণের ঝুঁকিটা আর থাকবে না।
ইউরোপের দেশ ও নর্থ আমেরিকার দেশগুলোতে টিকা দেওয়া শুরু হলেও এটা এখনো বেগবান হয়নি। এখন পর্যন্ত ফাইজার ও মর্ডানার টিকা এসেছে। এগুলো এখন পর্যন্ত ব্যাপক হারে দেওয়া হচ্ছে। এগুলো সংরক্ষন ও বিতরণে যুক্তরাষ্ট্রের মত দেশও হিমসিম খাচ্ছে। যেখানে ফার্মেসি নেই, ফার্মেসি থাকলেও ওই ধরনের কোল্ড স্টোরেজের ক্যাপাসিটি নেই। ওইসব এলাকায় টিকা পৌঁছালেও জনগণের শরীরে দেওয়া হচ্ছে না। ওখানে তারা তিন মাসে এক-তৃতীয়াংশ মানুষের দেহে টিকা কভার করতে পারবে। তার মানে হলো, প্রথম একশ’ দিনে যুক্তরাষ্ট্রে হার্ড ইমিউনিটি দেখা নাও যেতে পারে। মনে করা যায় যুক্তরাষ্ট্রে হার্ড ইমিউনিটি আসতে ছয় মাস সময় লাগবে।
আমার মূল্যায়ন হলো যেহেতু টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে, সাপ্লাইয়ের সমস্যাও আছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। যদিও টিকার প্রতি মানুষের আগ্রহেরও একটি সমস্যা আছে। এখন পর্যন্ত যেটা দেখা যাচ্ছে টিকার প্রতি মানুষের আস্থা আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেহেতু বিলিয়ন টিকা দেওয়া হয়ে গেছে। সমস্যা পাওয়া যায়নি এমন নয়, তা খুবই নগণ্য। সে হিসেবে টিকার প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ছে। কাজেই জুলাই-আগস্টের আগে ইউরোপ আমেরিকায় হার্ড ইমিউনিটি দেখতে পাব না। সে পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। এখন কিছু কিছু দেশ আবার ভালো করেছে, যেমন ইসরাইল। এখানে টিকাদান কর্মসূচি এক নম্বরে আছে বাহুতে পুষ করার ব্যাপারে। কিন্তু আমাদের বাজার ইউরোপ এবং আমেরিকায় শুরুর দিকে হোঁচট খেয়েছে। ওখানে রিকভারি হতে হতে জুলাই-আগস্টে হবে নাকি সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে হবে, কখন হবে তা বলা মুশকিল। কিন্তু রিকভারি একটা হবে।
আরও এক সপ্তাহের মধ্যে জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা এসে যাবে। জনসনের টিকা একটি গেম চেঞ্জারের ভূমিকা পালন করবে। কারণ, জনসনের একটি ডোজ লাগে। ফাইজার আর মর্ডানার ক্ষেত্রে যত চ্যালেঞ্জ জনসন অ্যান্ড জনসনের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ ততখানি হবে না। জনসন যদি বেশি পরিমাণে সরবরাহ করতে পারে তাহলে রিকভারির হার দ্রুত হবে এবং এখন যে সময়টা আমরা এক্সপেক্ট করছি তার আগেই রিকভারি হয়ে যাবে। এরপর আরও যদি দুয়েকটা টিকা চলে আসে, যারা ট্রায়ালে আছে এবং কাছাকাছি আছে তারা যদি আসে তাহলে টিকাদান কর্মসূচি আরও দ্রুত হবে। এবং রিকভারি গতি পাবে। সাপ্লাই সমস্যাটা সমাধান হয়ে যাবে।
বাংলাদেশে তো আক্রান্তের হার কম? বাইরেও টিকা দেওয়া শুরু হয়ে গেছে, আমরা কি আশা করতে পারি না?
আমাদের এখানে আক্রান্তের সংখ্যা কম। বিস্তৃতিও কম। শহরাঞ্চলে সীমিত। তারপরও কোভিড যে নেই তা নয়। টিকা দেওয়া শুরু হয়ে গেলে আমাদের শ্রমিকদের বাইরে বাজারে যাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেবে, প্লেনে ওঠার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেবে। টিকা দেওয়া যখন শেষ হয়ে যাবে তখন বিমান কোম্পানিগুলোর ব্যবসা নীতিও বদলে যাবে। এখন যেমন বিমানে ওঠার সময় আক্রান্ত কিনা তা টেস্টিং করে বিমানে উঠতে দিচ্ছে, কোভিড আক্রান্ত কি-না তা দেখছে, তখন তারা দেখবে টিকা দেওয়া হবে কি-না। তারা বিমানের এত বেশি জায়গা রাখতে পারবে কি-না।
এক্ষেত্রে আমাদের দেশে যদি টিকা না দেওয়া হয়, বিদেশে গমনেচ্ছুক শ্রমিকরা যদি টিকা না দিয়ে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করেন তাহলে তারা সমস্যার মুখোমুখি হবে। বিদেশে যেতে পারবেন না। সে সময় ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে, অন্যান্য দেশের লোক টিকা দিয়ে ফেলবে। তখন এমন হতে পারে আমাদের বিদেশে গমনেচ্ছুক শ্রমিকরা ভিসা পাওয়ার পর টিকা না দেওয়ার কারণে হয়তো বিদেশে যেতে পারবে না।
আপনি ব্যবসা-বাণিজ্য নেগোসিয়েশন করতে যাবেন, বিদেশিরা বাংলাদেশে আসবে- এই টিকা না দেওয়া থাকলে সমস্যা হবে। আমাদের এখানে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা না থাকলেও আমরা বিদেশে যেতে পারব না। বা বিদেশিরা আসতে পারবে না। যতদিন ভাইরাস আছে তততিন আক্রান্ত হয়ে গেলে কি হবে- এই সমস্যা তো থাকবে। সুতরাং আমাদের এখানেও টিকা দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
টিকা শুরু হয়েছে। জুলাই হোক, আগস্টে হোক বা আরও খানিক পরে হোক রিকভারি হবে। রিকভারি হয়ে গেলে একটি জোয়ার আসতে পারে। যেহেতু গত এক বছর মানুষ ভ্রমণ করতে পারেনি, বিলাস করতে পারেনি, রেস্তোরাঁয় যায়নি- এক বছর অনেক কিছুই করেনি। একমাত্র করোনা আক্রান্তের ভয়ে এক ধরনের স্থবির অবস্থা বিরাজ করছিল। ব্যয় করার ক্ষেত্রগুলো স্থবির ছিল। এগুলো পুষিয়ে নেওয়ার প্রবণতা আসবে- এটা স্বাভাবিক। ডিমান্ডের একটি চার্জ হবে এবং একটি স্ট্রং রিকভারি আশা করতে পারি।
সেটা কি তাহলে আমাদের সেই জুলাই-আগস্ট বা তার আগেও হতে পারে?
আগেও হতে পারে। যদি হার্ড ইমিউনিটি করার মতো ভ্যাকসিনের মতো অবস্থা তৈরি হয়। বর্তমান টিকা দেওয়া যে গতিতে চলছে, সে গতি না বাড়লে জুনের মধ্যে হার্ড ইমিউনিটি হবে না। কিন্তু গতি বাড়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল বলেই আমার কাছে মনে হয়।
নতুন ভ্যাকসিন আসবে আরও। কাজেই সরবরাহ সমস্যা যদি সমাধান হয়ে যায় তাহলে জুনের আগেই রিকভারি হয়ে যাবে। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার সঙ্গে সঙ্গে ডিস্ট্রিবিউশন কীভাবে করতে হয় তা শিখে যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন টিকাকে অবহেলা করেছিল, জো বাইডেন এসে জোর দিয়েছেন। এর ফলে সেখানে টিকা দানে গতি আসবে। উন্নত হবে সেটা কোনো সন্দেহ নেই। কতটা দ্রুতগতিতে হয় সেটা এখন দেখার বিষয়।
ইউরোপের দেশগুলোতে জুন-জুলাই-আগস্টের মধ্যে রিকভারি আশা করতে পারি। যদিও ইউরোপের দেশগুলোতে বাধা পেয়েছিল। কিন্তু তারাও টিকা দেওয়া শুরু করতে পেরেছে। ইউরোপের দেশগুলোতে একক দেশ হিসেবে কম জনসংখ্যা হওয়ার কারণে তারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই রিকভারি করে ফেলতে পারবে।
তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে একটি রেজাল্ট আশা করছে!
আমার মনে হয় না এত তাড়াতাড়ি রিকভারি হবে। ইউরোপে আক্রান্তের হার এখনও সর্বোচ্চ পর্যায়ে আছে। কাজেই আগামী ২/৩ সপ্তাহে কিছু একটা হয়ে যাবে তা আশা করা ঠিক হবে না। এ সময়ে মৃত্যু বাড়বে, হাসপাতালে ভর্তি হারও বাড়বে। ইনফেকশন হার কিছুটা কমতে পারে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বড় ধরনের পিক-আপ করবে এমন আশা করা যায় না। এটা একটু বেশিই আশা করা হয়ে যাচ্ছে। তবে জুলাই-আগস্টে রিকভারি হওয়ার প্রেক্ষাপটে বিক্রি বাড়বে। ওই বিক্রিকে ধরে বায়াররা কার্যাদেশ দিলে সেটা কমপক্ষে তিন মাস লিটটাইম দিয়ে কার্যাদেশ দেবে। সে হিসেবেই এপ্রিল-মার্চ মাসের আগে কার্যাদেশ বৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই। বরং আরও খানিক কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
দেশে টিকা নিয়ে কথাবার্তা শুরু হয়েছে। পক্ষে-বিপক্ষে কথা বলা হচ্ছে। টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে এ আলোচনা সমস্যা তৈরি করবে কি-না?
দেশে ২০ লাখ টিকা এসেছে। এতে ১০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব হবে। এরপর সিরামের সঙ্গে যে চুক্তি আছে প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে টিকা দেবে। তাহলে দেশের ১৬ কোটি মানুষের টিকা দিয়ে হার্ড ইমিউনিটি করতে হলে ১০ কোটি মানুষকে টিকা দিতে হবে। এ পরিমাণ টিকা দিতে সময় লাগবে জুলাই-আগস্ট পর্যন্ত। ওই পর্যন্ত যেতে হলে আমাদের সরবরাহ বাড়াতে হবে। ২০ লাখ টিকা এসেছে কিন্তু আমরা এখনো টিকা শুরু করতে পারিনি।
প্রায়োরিটি ঠিক করে এখনো তালিকাও করা হয়নি। কারণ এই ব্যবস্থাপনায় আমাদের মনোযোগ দিতে হবে। এই চ্যালেঞ্জ আমাদেরও ফেস করতে হবে। ইপিআই-এর স্টোরগুলোতে টিকা রাখা হচ্ছে। কিন্তু ওইগুলোর ধারণক্ষমতা কতটা তাও দেখতে হবে। সিরামের সঙ্গে যে চুক্তি আছে আমরা যদি এই ৫০ লাখের বেশি টিকা সংগ্রহ করতে পারি তাহলে আরও খানিক এগিয়ে আনা যাবে।
জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা যদি এসে যায়, কোভ্যাক্সের টিকা যদি এসে যায়- এক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলো বেশি টিকা পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। শুরুতে আমেরিকা উন্নয়নশীল দেশগুলোকে অবহেলা করেছিল। পরবর্তিতে বিলগেটস ফাউন্ডেশন কোভ্যাক্সের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর তারা অনুধাবন করা শুরু করেছে উন্নয়নশীল দেশগুলো নিরাপদ না হলে আমরা নিরাপদ নয়। বিষয়টিকে ট্রাম্প পাত্তাই দিত না।
এখন বিষয়টি পাত্তা পাবে। কোভ্যাক্সের লক্ষ্য হলো তারা উন্নয়নশীল দেশগুলোর কমপক্ষে ২০ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে চায়। সেই হিসেবে যদি আমরা ২০ শতাংশ টিকা পেয়ে যাই, এর বাইরে ৪০-৫০ শতাংশ যদি জি টু জি, বি টু বি-সহ অন্যান্য মাধ্যমে পাওয়া যায় তাহলে চলতি বছরের শেষ নাগাদ হার্ড ইমিউনিটি আনা সম্ভব হবে।
আর এই সময়টাতে হার্ড ইমিউনিটি আনা সম্ভব হলে করোনা রিকভারি পরবর্তী যে অর্থনৈতিক জোয়ার শুরু হবে তাতে বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করা সহজ হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্থনীতির ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে বড় ধরনের জোয়ার আসবে সেটা ধরা সম্ভব হবে। সেটা ধরতে না পারলে আমাদের বড় ধরনের সুযোগ হাতছাড়া হবে।
বাংলাদেশে আক্রান্তের হার কম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বলা হচ্ছিল শীতে মৃত্যুর হার বাড়তে পারে। কিন্তু তেমনটা হয়নি-বিষয়টি কীভাবে দেখবেন?
আমাদের এখানে এই যে আক্রমণের হার কম। এই যে আক্রান্তের হার কমের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আমরা কিন্তু এখনো পাইনি। এই ব্যাখ্যা খুবই দরকারি। কারণ করোনা নিয়ে করণীয় নির্ধারণে এগুলো খুবই জরুরি। এখানে কম আক্রান্তের পেছনে কোন কারণগুলো কাজ করছে। এমন যদি কোনো কারণ হয় যে, জেনেটিক কারণে আক্রান্ত কম হচ্ছে, বিদেশে তো এই বাংলাদেশির আক্রান্ত মৃত্যুর হার অনেক বেশি। বাংলাদেশির দেহে যদি করোনাবিরোধী এন্টিবডি থেকে থাকে তাহলে একই বাংলাদেশি বিদেশে গিয়ে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বেশি কেনো? ওরা তো বাংলাদেশি রক্ত নিয়েই বিদেশে গেছে। তাহলে কারণটা কী। কারণ এমন হতে পারে- করোনার যে ধরনটা বাংলাদেশে এসেছে তা তত বেশি ঘায়েল করতে পারছে না।
বাংলাদেশে করোনার ধরনটা ভিন্ন হলেও যেখানে আক্রমণ করছে সেখানে মানুষ মরছে। আমাদের জনশক্তি তরুণের সংখ্যা বেশি, বেশি ঘনবসতি। একই ঘরে বেশি সংখ্যক মানুষ বসবাস করলেও তারা সব সময় ঘরে থাকে না। ওরা তো খোলা আকাশের নিচে তাকে। তাদের কাজ করতে হয়। শারীরিক শ্রম দিতে হয়। এক তথ্যে দেখা গেছে-যে বেশি শারীরিক বেশি পরিশ্রম করে, এক্সারসাইজ করে তাকে করোনা দ্রুত আক্রমণ করতে পারে না। এটা কিন্তু পরীক্ষিত কোনো বিষয় নয়, অনেকটা হাইপোথেডঁশ। এ কারণে এগুলোর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা প্রয়োজন। আমরা অনেকটাই তুষ্টিতে ভুগি যে, এখানে করোনা বড় কোনো সমস্যা নয়। গ্রামে গেলে মানুষ করোনা চিনেই না। তার মানে এই নয় যে আমরা করোনা অবহেলা করব। এই যে আট হাজারের মতো মৃত্যু, একটি রোগের কারণে এত মৃত্যু অবজ্ঞা করার মতো কোনো বিষয় নয়।
করোনা আক্রান্ত হলে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব থাকে-
করোনা আক্রান্ত যারা বেঁচে আছেন তারা কিন্তু পুরোপুরি মুক্ত হয়েছে তা নয়। একবার যারা করোনায় সিবিয়ার আক্রান্ত হয়েছেন তারা বলছেন, এটা একটি ভয়াবহ রোগ। যারা আক্রান্ত হয়েছেন লংটার্ম কি হবে- বিজ্ঞানীদের অনুসন্ধানের শেষ নেই। এখন হার্ট অ্যাটাক হবে না, করোনা যার হার্টকে আক্রান্ত করেছে ৩০ বছর পর হয়তো আবার আঘাত করতে পারে। তাই করোনাকে অবহেলা করা যাবে না।
করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রে আমাদের উদ্যোগগুলো কেমন কাজে লেগেছে বলে মনে করেন?
স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে আমাদের সরকারের একটি ইতিবাচক দিক আছে। সরকারের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি আছেন, তারা শুরু থেকে মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। যাকে বলে লিডিং ফ্রন্ট অব দ্য ফ্রন্ট। মাস্ক ব্যবহারে পলিটিসাইজ হয়নি, আমাদের লোকরা বিদ্রোহ করেনি। অবহেলা করেছে- এটা ঠিক আছে। বাজারে গিয়ে মাস্ক পরেনি- কাউকে জিজ্ঞাসা করা হলে বলেছে গরম লাগে, পরতে খেয়াল নেই। কিন্তু ব্যক্তিস্বাধীনতাকে হস্তক্ষেপ করেছে বলে বিরোধিতা করেছে- এমন ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেনি। যেমনটা আমেরিকায় দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশে সামাজিক দূরত্বও মানা হচ্ছে। ঢাকার কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাদের বুকিং নেই-ই।
এটা সরকার নির্দেশ দেয়নি, মানুষ স্বপ্রণোদিত হয়েই করছে। ঘরে থাকা নিয়ে মানুষের ক্লান্তিও চলে এসেছে। এ জন্য মানুষ বাইরে বের হচ্ছে। করোনার আগের মতই ঢাকার পথে মানুষের উপস্থিতি বেড়ে গেছে। সড়কের জ্যাম বেড়েছে। কিন্তু মাস্ক ব্যবহার, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ইমিউনিটি পুরোপুরি না আসা পর্যন্ত বজায় রাখতেই হবে। ড. বিজয় কান্তি শীলের মতে, ঢাকাতে হার্ড ইমিউনিটি চলে এসেছে। ইনফেক্টেট হয়ে হার্ড ইমিউনিটি চলে এসেছে। ঢাকার বাইরে এখন আক্রান্ত কম, কিন্তু আগামীতে আক্রান্ত বাড়বে না- এটা জোর দিয়ে বলা যাবে না। এ জন্য সাবধানতার বিকল্প নেই। অর্থনীতিতে একটি কথা আছে- ‘আপনি বেশিটাই করেন, কম করার চেয়ে।’