নওগাঁর বদলগাছীতে বেতনের টাকা দিয়ে মোসলেম উদ্দিন (৭৫) নামে এক অসহায় বৃদ্ধকে দোকান করে দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবু তাহির। মঙ্গলবার (৩০ জুন) দুপুরে মালামাল কিনে ওই বৃদ্ধের দোকানটি সাজিয়ে দেয়া হয়।
বৃদ্ধ মোসলেম উদ্দিন উপজেলার আধাইপুর ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের বাসিন্দা। ইউএনওর এমন ব্যতিক্রম ও মহৎ উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এক সময় গাছের ব্যবসা করতেন মোসলেম উদ্দিন। প্রায় ৩০ বছর গাছের ব্যবসা করেছেন। হার্টের অসুস্থায় তিনি গাছের ব্যবসা বাদ দিয়ে গত ১৬ বছর আগে বাড়িতে মুদি দোকান দেন। এক সময় দোকানে বেশ ভালো বেচাকেনা হতো। দোকানের উপার্জনেই চলতো তার সংসার। কিন্তু বাড়ি থেকে একটু দূরে বদলগাছী-আক্কেলপুর সড়কের আধাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের পাশে বাজার গড়ে ওঠায় তার বেচাকেনায় ভাটা পড়ে। এতে প্রায় বন্ধ হয়ে যায় দোকান। ফলে তার জীবিকা নির্বাহ কষ্টকর হয়ে পড়ে। বাড়ি ছাড়া তার জমিজমা কিছুই নেই।
কয়েকদিন আগে মোসলেম উদ্দিন ইউনিয়ন পরিষদের পাশে রাস্তার জমিতে একটি ছোট টিনের ঘর দিয়ে চায়ের দোকান শুরু করার প্রস্তুতি নেন। কিন্তু এতে বাঁধ সাধে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি। এরপর তারা দোকান ঘরটি ভেঙে সরিয়ে দেন। কোনো কুলকিনারা না পেয়ে তিনি গত ২৮ জুন ইউএনওর শরণাপন্ন হন। ইউএনও তাকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। আধাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের পাশেই তাকে দোকান করে দেয়া হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে তার দোকানের সামনে গাড়ি থেকে মালামাল (বিভিন্ন ধরনের বিস্কুট, কয়েক প্রকার শ্যাস্পু, সাবান, চিপস, কয়েল, ব্রাশ, ব্লেড, হুইল পাউডার ও স্যালাইন) নামিয়ে দিয়ে বলা হয় এগুলো আপনার। এমন কথা শুনে তিনি হতচকিত হয়ে পড়েন। এতোগুলো মালামাল দেখে অবাক হয়ে যান। দোকান সাজানোর পর স্ত্রী আবেদা বেগমকে নিয়ে বেচাকেনা শুরু করেন।
বৃদ্ধ মোসলেম উদ্দিন জানান, তার ছয় ছেলে-মেয়ে। ছেলেদের আলাদা সংসার। এক মেয়ে স্বামী পরিত্যাক্তা হওয়ার পর তার সঙ্গেই থাকে। স্ত্রী, মেয়ে ও নাতনিসহ তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা চারজন। তিনি ছেলেদের ওপর নির্ভরশীল হতে চান না। যতদিন তিনি বেঁচে থাকবেন নিজেই পরিশ্রম করে বাঁচতে চান।
তিনি বলেন, ইউএনও স্যার না থাকলে হয়ত এখানে আমার দোকান করা সম্ভব হতো না। স্যারের জন্য অনেক দোয়া রইল, তিনি যেন সুস্থ সবল থাকতে পারেন। স্যারের মানবতা আমাকে মুগ্ধ করেছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবু তাহির বলেন, মোসলেম উদ্দিন ভিক্ষাবৃত্তি না করে সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে চাইছিলেন। দোকান স্থাপন করার কোনো জায়গা পাচ্ছিলেন না। বিষয়টি জানার পর রাস্তার পাশে তাকে দোকান ঘর তৈরি করতে সাহায্য করা হয়। যাতে তিনি দোকান পরিচালনা করে পরিবারসহ বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে পারেন।