নিজস্ব প্রতিবেদক/
করোনাভাইরাসের ভুয়া টেস্ট ও টাকার বিনিময়ে সনদ দেওয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ারের (জেকেজি) ৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) জমা দিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বুধবার দুপুরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক লিয়াকত আলী ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে এ চার্জশিট জমা দেন।
এতে জেকেজির প্রধান নির্বাহী আরিফুল হক চৌধুরী ও তার স্ত্রী ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী, জেকেজির নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম, প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর হিমু, তার স্ত্রী তানজীনা পাটোয়ারী, জেকেজির কো-অর্ডিনেটর আবু সাইদ চৌধুরী, বিপ্লব দাস ওরফে আলমান এবং জেবুন্নেসা রিমাকে আসামি করা হয়েছে।
আসামিদের মধ্যে আবু সাইদ চৌধুরী আরিফুল হক চৌধুরীর ভগ্নিপতি এবং জেবুন্নেসা বোন। চার্জশিটে করোনা নমুনা সংগ্রহের পর টেস্ট ছাড়াই সনদ দেওয়া ও টাকার বিনিময়ে সনদ দেওয়ার ক্ষেত্রে আরিফুল ও তার স্ত্রী সাবরিনাকে মূলহোতা এবং অপর ৬ আসামি তাদের প্রতারণার সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলাটির তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি গোলাম মোস্তফা রাসেল সমকালকে জানান, করোনা টেস্ট নিয়ে জালিয়াতির ঘটনায় তেজগাঁও থানার মামলাটিতে তারা দ্রুততম সময়ে চার্জশিট জমা দিয়েছেন। নিবিড় তদন্তে নানা তথ্য-প্রমাণ পাওয়ায় আদালতে অভিযোগ প্রমাণিত হবে ও আসামিদের শাস্তি নিশ্চিত হবে বলেও তারা মনে করছেন।
ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘চার্জশিটে ৮ আসামির মধ্যে কার কী অপরাধ তা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।’
গত মার্চে জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ার (জেকেজি) বুথের মাধ্যমে বিনামূল্যে করোনা নমুনা সংগ্রহের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে চুক্তি করে। এরপর ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের পৃথক ছয়টি স্থানে ৪৪টি বুথ স্থাপন করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। এসব এলাকা থেকে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৩৫০ জনের নমুনা সংগ্রহ করে জেকেজি। তবে সংস্থাটি চুক্তি ভেঙে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ৫ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকার বিনিময়ে নমুনা সংগ্রহ শুরু করে। এসব নমুনা পরীক্ষা ছাড়াই মনগড়া রিপোর্ট দেয় জেকেজি।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী একজন তেজগাঁও থানায় মামলা করে। এরপর গত ২৩ জুন আরিফুল হক চৌধুরীসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গত ১২ জুলাই ডা. সাবরিনাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে শফিকুল ও জেবুন্নেসা রিমাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট ডিবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৮ আসামির মধ্যে হুমায়ুন কবির হিমু ও তার স্ত্রী তানজিনা পাটোয়ারী আদালতে জবানবন্দি দিয়ে দায় স্বীকার করেন। তাদের ভাষ্যে উঠে আসে, আরিফুল ও তার স্ত্রী সাবরিনার যোগশাজশে তারা করোনার ভুয়া সনদ বিক্রি করছিল। পরে একই তথ্য জানিয়ে শফিকুল ইসলামও জবানবন্দি দেন। এ ছাড়া আরিফুল হক চৌধুরী ও ডা. সাবরিনাকে রিমান্ডে নিয়ে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। শেষ পর্যন্ত ভুয়া টেস্টের কথা স্বীকার করেন তারা।