মোস্তাফিজুর রহমান, রাজশাহী প্রতিনিধি:
নাম রাখছে চিনি। যখন যেখানেই থাকুক না কেন “মা চিনি” বলে ডাকদিলে সোজ্জা মায়ের কাছে চলে আসে। খুদা লাগলে মেউ মেউ করে ডাকের আওয়াজে ঘরে থাকাই যেন দায় হয়ে পরে। ধমক দিলে চুপচাপ থাকতো আর আমার দিকে মায়াবি ভাবে তাকাই থাকতো যতক্ষণ আদর না দিবো ততক্ষণ মন খারাপ করে থাকবে। মনে হতো সত্যি সে আমার সন্তান আর আমি তার মা।
তাকে আমি ৯ জুন ২০২১ সালে বাড়ির পাশে ঘুরতে গিয়ে এক ইট খোয়ার পালার পাশে কুড়িয়ে পাই। জানেন ভাই! তাকে যেদিন কুড়িয়ে পেয়েছি সেই দিনটা ধরে এ বছর তার জন্মদিন উদযাপন করতে চেয়েছিলাম কিন্তু হলো না।
মায়ের অসুস্থতার কারনে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা যায়। সেখানে এক আত্মীয়র বাসাতে থেকে নিয়মিত দুই মাস চিকিৎসা নিতে হয়েছে। সে জন্য আমি চিনিকে ঢাকাতে নিয়ে যেতে পারি নি। কারন আমি যার বাসাতে থাকবো তারা কি আমার চিনিকে পছন্দ করবে? তারা কি পশুপাখিকে পছন্দ করে! যদি চিনি কে রাখতে না দেই। তাই আমার বাড়ির আশে পাশের সবাইকে বলে গেছি চিনিকে দেখে রাখতে। কেউ যেনো না মারে। বিশ্বাস করেন ভাই আমি ঢাকাতে যে কই দিন ছিলাম মনে হচ্ছিল চিনির সাথে ফোনে কথা বলি, তাকে দেখি। পরে প্রায় ২ মাস পর বাড়ি এসে দেখী চিনি বাড়িতে নেই সাথে বাচ্চা ছিলো তারাও নেই, অনেক খোঁজা খুজির পর তাদেরকে পাই। সাথে সাথে সাবান শেম্পু দিয়ে গোসল করায় । কিন্তু ততক্ষণে চিনির বাচ্চারা অসুস্থ হয় আর মারাও যায়। বাচ্চাদের টেনশনে চিনিও খাওয়া দাওয়া সব বন্ধ করে দেই। চিনি আগের মত খেলাধুলা করে না। সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলে। আমি কি করবো না করবো বুঝতে পারছিলাম না। পরে উপজেলা পশু ডাক্তার কাছে নিয়ে যায়। কিন্তু ডাক্তার দেখে বলেন, আপনার চিনি মনে হয় বেশি দিন বাঁচবে না অনেক জ্বরসহ আরো অনেক অসুখের নাম নিলো। বলে রাখি, মোস্তাফিজুর (প্রতিবেদক) ভাই আমি জানতাম না এই ধরনের প্রাণী কে ডাক্তার চিকিৎসা দেই। জানলে আগেই নিয়ে যেতাম, আমার আম্মুর এক পরিচিত চিনিকে ডাক্তার দেখানোর কথা বলে। পরে ডাক্তার দেখেয়েও চিনিকে বাঁচাতে পারিনি।
এমনটাই ভাবে গল্প হচ্ছিলো রাজশাহীর বাঘা উপজেলার দিঘীর পাড়ে শিল্পী নূপুরের সাথে। নূপুর বর্তমান ইন্টার শেষ করে এডমিশন দিচ্ছে। বাবার একমাত্র মেয়ে। জন্ম স্থান কুষ্টিয়া। বাবা ব্যবসা করেন বলে বাবার ব্যবসার জন্য বর্তমান তাদের থাকতে হয় ঈশ্বরদীতে। মা গৃহিণী। নূপুর গান করতে নতুন নতুন রান্না শিখতে আর চিনিকে নিয়ে সময় পার করতে পছন্দ করতেন। তবে নূপুরের মতই চিনিকে ভালোবাসতেন তার মা। নূপুর যখন তার চিনির কথা বলছিলো তখন তার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছিলো চিনির প্রতি ভালোবাসার পানি। চিনি হলো তার পৌষা “মা বিড়ালে”র নাম। চিনির (মা বিড়াল) ছিলো তিনটা সন্তান। সন্তান গুলো আগে মারা যায়।
নূপুর থেকে যান্তে চাই, তোমার পশুর প্রতি প্রেমটা কবে থেকে? উত্তরে বলেন, আমি না পশুপাখির কষ্ট টা ছোট্ট সময় থেকেই নিতে পরিনা। মন বলে তারা তো কাউকে কিছু বলতে পারে না অভিযোগ করতে পারে না। তাদের মনে অনেক কষ্ট, খুদা লাগলে খাওয়ার পাইনা কত্ত না ক্ষুধার্ত থাকে। আমার মনে তাদের নিয়ে নানা চিন্তা হয়।
প্রশ্ন করি বিড়ালের প্রতি ভালোবাসাটা শুরু কবে থেকে। উত্তর করেন, আমি ছোট্ট কাল থেকে দেখি দাদি বিড়াল পালতো আমি দাদির বিড়াল টা আমার মনে করে যত্ন নিতাম। একদিন দেখি বিড়াল টাকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। দুই থেকে দিন পরে দেখি এক প্রতিবেশীর ঘরের টিনের উপর শুয়ে আছে তার মৃত্য দেহ। সেদিনো অনেক কষ্ট পাইছি। পরে আবার চিনি কষ্ট দিলো। তাকে জিজ্ঞাসা করি নতুন করে আরেকটি বিড়াল পৌষা কবে থেকে শুরু করবেন? বলেন, ভাই আমি আর কোন কিছু পৌষবো না। বার বার কষ্ট পেতে চাই না। আর চিনির যায়গাইটা কাউকে দিতে চাই না পাবেও না।
নূপুরের মা বলেন, আমার মেয়ে পশুপাখিকে অনেক ভালোবাসে। শুধু চিনি (বিড়াল) না যে কোন পশু দেখলেই কলে নিতে লাগে। হাত বুলিয়ে আদর করে। চিনি মারা যাবার পর আমার মেয়ে ৩ দিন ভাত মুখে দেই নি। সব সময় কান্না করছে মন খারাপ করে ঘরে বসে থাকছে। আমিও অনেক কষ্ট পেয়েছি। চিনি আমাকে আর আমার মেয়েকে মাতিয়ে রাখতো। কিন্তু সে আর বেঁচে নেই। মিস করি চিনিকে।