দেখতে দেখতে ১৪৩১ বঙ্গাব্দের ক্যালেন্ডারের শুধু পাতা নয়, গোটা ক্যালেন্ডারটাই পাল্টে যাবে চৈত্রের শেষ দিনেই । ওদিকে গ্রাম বাংলার মনের মধ্যে রয়ে গেছে চৈত্রের গান বিশেষ করে ঘেটু গানের রেস । ঘরে,বাইরে,গাছের নিচে কিংবা নদীর তীরে ঘেটু ফুল দিয়ে ঠাকুরের পুজো হয়। চর্ম রোগের প্রভাব থেকে মুক্ত হতে এই পুজো হতো। চৈত্র কথার অর্থ উজ্জ্বল আলো রাজা দক্ষ তার সাতটি কন্যার নাম ৭ নক্ষত্রের নামে রাখেন এদের মধ্যে দুই কন্যা চিত্রা ও বিশাখা থেকে চৈত্র ও বৈশাখ মাসের নামকরণ বলে অনুমান করা হয়। বাঙালি আজও মাসের শেষ দিনটিকে সংক্রান্তি বলে।
আধুনিকতার শিখরে পৌঁছেও দুটি সংক্রান্তিকে যত্নে ধরে রেখেছে পৌষ বা মকর সংক্রান্তি চৈত্র বা ছাতু সংক্রান্তি । চৈত্র সংক্রান্তিতে গ্রাম বাংলায় এখনো গম বা জবের ছাতু ইষ্টজদেবতার উদ্দেশ্যে নিবেদন করা হয়। কাঁচা আম গুড় ছোলার ডাল তুলসী গাছে আর বংশ মপরম্পরায় বট বৃক্ষের বা অশ্বত গাছের গোড়ায় দিয়ে প্রণাম করে তবেই সকলে জলস্পর্শ করে।
তাছাড়া এ সময় বেলের শরবত, বাতাসা,সেলো -পাটালি ,তরমুজ ,ভিজা ছোলা আর শসা সহযোগে শীতলা বা ঠান্ডা ভোগ দেওয়ার রেওয়াজ রয়ে গেছে আবহমান বাংলার বিভিন্ন জায়গায়।
চৈত্র মাসের বড় পরব হলো গাজন এসেছে সংস্কৃত গাজনের প্রাকৃত রূপ গর্জন থেকে।
ভক্তের দল জয়বাবা বুড়ো শিবের জয়,জয় বাবা ভোলানাথের জয়, ভোলা বাবার চরণে সেবা লাগে বলে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে গর্জন করেন তাই গাজন। শিবের প্রকৃতি সতত গম্ভীর বলে মুর্শিদাবাদ,মালদা চাঁপাইনবাবগঞ্জ গম্ভীরা নামে চলে এসেছে তবে রাঢ় বাংলায় নানা স্থানে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলে আসছে এই শিবের গাজন। চৈত্র মাসে গাজনের আগে ঘঠ বসে।
সেদিন ঢাকে কাঠি পরানোর দিন।
শূণ্য পুরানে আছে শিব ভক্ত বান রাজা ভগবান কৃষ্ণের সম্মুখ সমরে ক্ষতবিক্ষত হইলে মহাদেব তাকে বিপদমুক্ত করেন তাই ভক্তের দল গাজনের নানার রকম শারীরিক কৃচ্ছতা সাধনের মধ্য দিয়ে দেবাতি দেবকে তুষ্ট করতে প্রয়াসী হন। সর্বাঙ্গে বান ফোড়া আগুনে হাটা পিঠে বড়শির বড় বড় কালা ঢুকিয়ে চড়কে ঘোরা ইত্যাদি শারীরিক যন্ত্রণাদায়ী আচার পালন এখন আর চোখে পড়ে না। তবে জায়গা বিশ্বাসের পালিত হয়।
অনেক জায়গায় এ সময় একদিন হয় রাত গাজন তারপর দিন গাজন ,একদিন হয় চড়ক। মেলায় মানুষের ঢল নামে অ্যামেচার অথবা অপেরা নামের যাত্রাপালা মঞ্চস্থ হয়। চৈত্র মাসে অশোক ষষ্ঠী ব্রত পালনের বিধান রয়েছে পাকা কলার ভেতরে অসুখ ফুল গিলে খেলে সংসারে দুঃখ প্রবেশ করতে পারে না ।এই বিশ্বাস থেকে মেয়েরা এই ব্রত পালন করে। আমরা বাঙালি আমাদের বারো মাসে তেরো পার্বণ। বাঙালিরা গাভী ও মহিষের দূধ থেকে একশো রকম মিষ্টি বানাতে পারে যেটা পৃথিবীতে অপ্রতুল, তাইতো আমরা বাঙালি।
লেখক- এম.কলিম