নিজস্ব প্রতিবেদক নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলায় ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠ বনপাড়া কলেজ স্থাপিত হয় ১ জুলাই ১৯৮৬ সালে।কলেজটিতে এক সময়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৩ হাজার ৩০০জন। এই কলেজ থেকে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসি’তে স্ট্যান্ড করে কয়েকজন শিক্ষার্থী। বিদ্যাপিঠে যাতায়াতের প্রধান পথ কলেজ রোড বন্ধ হওয়ায়,
উন্নয়ন ও সংস্কারের অভাব সহ নানা সমস্যায় কলেজটি এখন জর্জরিত।ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোছাঃ কহিনুর খাতুন ও শিক্ষক প্রতিনিধি সহকারী অধ্যাপক এম.এ লুৎফর রহমান বলেন যে– উপজেলার মাঝগাঁও ইউপি’র তৎকালিন চেয়ারম্যান ডা.আয়নুল হকের সভাপতিত্বে ও অধ্যক্ষ একরামুল আলমের নেতৃত্বে যাত্রা শুরু হয় কলেজটির। ১৭০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে পথ চলা কলেজটির বয়স এখন ৩৯ বছর। কলেজটির প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ১৯৮৬-৮৭ শিক্ষা বর্ষে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় ১৫০ জন। তারই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে কলেজটিতে বিশালাকার ও কারুকার্য খচিত মূল ফটক, প্রশাসনিক, একাডেমিক, বিজ্ঞান ও কলা ভবন সহ ছাত্রীনিবাস, শহীদ মিনার নির্মিত হয়। তৈরী হয় খেলার মাঠ। কলেজটিতে বাংলা, সমাজকর্ম, ব্যবস্থাপনা, হিসাববিজ্ঞান ও
প্রাণীবিদ্যা এই পাঁচটি বিষয়ে অনার্স খোলা হয় এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৩ হাজার ৩০০ জন। তাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক ছিল ছাত্রী। এতে কলেজটির সুনাম ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।
নানাবিধ সমস্যায় এই সুনাম এখন মলিন হয়ে গেছে। এক সময়ে নাটোর-পাবনা মহাসড়ক থেকে কলেজটির মূল
গেইট পর্যন্ত প্রায় ১০০ মিটার দীর্ঘ্য রাস্তা ছিল। যার নাম ছিল কলেজ রোড। মহাসড়ক থেকে রোড বরাবর তাকালেই
দেখা যেত বিশালাকার কলেজ গেইট। সময়ের বিবর্তনে রোডটি বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং
শিক্ষার্থীরা। ছাত্রী সংখ্যা কমে গেছে আশঙ্কাজনকভাবে। ৩৯ বছর বয়সী কলেজটির বর্তমান ছাত্রী সংখ্যা মাত্র ৭২ জন
ও মোট শিক্ষার্থীর সংখ্য ২১৫০ জন।কলেজের দাতা সদস্য মো. রেজাউল করিম ও সাবেক ছাত্র দল নেতা মো. আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন যে —তৎকালে কলেজ
রোড ব্যবহার করে উক্ত কলেজসহ বনপাড়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা, মাঝগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ, বনপাড়া রেজিস্টারি
অফিসে প্রতিদিন যাতায়াত করতো শত-শত শিক্ষার্থী ও জনগণ। সে কলেজ রোড এখন বন্ধ। রোডের জায়গা ব্যক্তি
মালিকানা দাবী করে দখলে নেয় কথিত মালিকরা। ইউনিয়ন পরিষদ, রেজিস্টারি অফিস স্থানান্তরিত হয়েছে অন্যত্র। ঔই
চত্বরে স্থাপিত হয়েছে বনপাড়া পৌরসভা। বর্তমানে ব্যস্তময় বনপাড়া পৌর গেইট ও রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে
কলেজটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ ব্যস্তময় পথে যাতায়াতে বখাটের উৎপাতসহ নানাবিধ সমস্যায় পড়তে হয় কলেজ
ছাত্রীদের। এতে ছাত্রী সংখ্যা কমে এখন দাঁড়িয়েছে মাত্র ৭২ জনে। কলেজটির ঐতিহ্য ও সুনাম ফেরাতে কলেজে সহজে
যাতায়াতের জন্য নিজস্ব রাস্তা অতি প্রয়োজন।মহাসড়কের পূর্ব পাশে খাদ্য গোডাউনের ওয়াল ঘেঁসে সরকারি জায়গায় পরিত্যাক্ত যাত্রী ছাউনি, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অফিস, পৌরসভার জায়গাতে পরিত্যাক্ত ২ খানা টিনসেড ঘর রয়েছে। তৎসংলগ্ন পূর্বে কলেজ গেইটের পাশে ব্যক্তি মালিকানা বনপাড়া বনিক সমিতির টিনসেড অফিস ঘর রয়েছে। যাহা আলোচনার মাধ্যমে উত্তরা ব্যাংকের পাশে পৌরসভার ফাঁকা জমিতে স্থানান্তর করা হলে কলেজ গেইট থেকে মহাসড়ক পর্যন্ত প্রায় ১০ মিটার প্রশস্থ ও ১০০ মিটার দীর্ঘ যাতায়াতের রাস্তা অবমুক্ত করা সম্ভব।প্রয়াত সাবেক অধ্যক্ষের স্ত্রী ও সহকারী অধ্যাপক মোছা. মুঞ্জুয়ারা খাতুন বলেন যে দীর্ঘ্য দিন যাবৎ কলেজটিতে দৃশ্যমান উন্নয়ন ও সংস্কার না হওয়ায় ঐতিহ্যবাহী দৃষ্টিনন্দন কলেজটির সুনাম ও সৌন্দর্য মলিন হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সৌন্দর্য ও মনোরম পরিবেশ শিক্ষার্থীদের মনকে আকৃষ্ট করে। তারজন্য দরকার কলেজটির পুরাতন ভবনগুলোর সংস্কার সহ উন্নয়ন। কলেজের শিক্ষকমন্ডলী ও শিক্ষার্থীগণ ইতোমধ্যে কলেজের রাস্তা অবমুক্তকরণের জন্য উর্ধতন কতৃপক্ষ বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছেন।উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও কলেজ কমিটির সভাপতি লায়লা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেছেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তার কাছে ২টি প্রতিবেদনে (১) যে বরাবর কলেজের পূর্বেকার রাস্তা ছিল, সে বরাবর রাস্তা তৈরী করতে, (২) বনিক সমিতি ও কৃষি অফিস বরাবর রাস্তা করতে কিকি প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তা জানতে চাওয়া হয়।
প্রতিবেদনে বুঝা যায় পূর্বেকার রাস্তা বরাবর পুনরায় রাস্তা করতে গেলে মালিকানা জমি আছে মানুষের। আবার
কৃষি অফিস বরাবর রাস্তা করতে মেইন সমস্যা ওখানে কৃষি অফিসের একটা বিল্ডিং আছে। সেটা যদি আন্তঃমন্ত্রণালয়ের হয় তাহলে আন্তঃমন্ত্রনালায়ের সিদ্ধান্ত লাগবে। এখন কৃষি অফিস বলছে জমিটি তাদের। কিন্তু কাগজপত্র দেখাতে পারছেনা। জমিটা আরএস রেকর্ডে ১ নং খাস খতিয়ানে কালেক্টর বরাবর লেখা। বিষয়টি নাটোর জেলা কৃষি অফিসার ও ডিসি স্যারের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সামনে রোববার রাজস্ব মিটিংয়ে বিষয়টি আলোচনা হবে। কলেজের রাস্তা অবমুক্তকরণের জন্য চেষ্টা অব্যাহত আছে।
বড়াইগ্রাম প্রতিনিধিঃ রায়হান সরকার