কাওছার আলম/
হুমায়ূন আহমেদ এঁর লেখার সাথে আমার পরিচয় বেশ পরে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, শহীদুল্লাহ কায়সার, জহির রায়হান, সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহ, সাথে প্যারীচাঁদ মিত্র, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল, শরৎচন্দ্র, বিভূতিভূষণ, মানিক, তারাশঙ্কর প্রমুখ ঔপন্যাসিকের লেখা পড়ে মাথা ভারি করার পর হুমায়ূন পড়া শুরু করেছিলাম।
শঙ্খনীল কারাগার পড়ার পর ভালো লাগা তৈরি হয়েছিল। অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুগম্ভীর আড্ডাগুলোতে হুমায়ূন নিয়ে আলোচনা হতো না। কিন্তু বোঝা যেত অনেকেই হুমায়ূন আহমেদ পড়ছে।
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বভাবতই জীবিত লেখকের লেখার আলোচনা-সমালোচনা করে না। এমন কি আমার ঝানু প্রফেসর তাঁর লেখাকে লেখায় মনে করতেন না। পড়তে নিরুৎসাহিত করতেন। কিন্তু সবাইকেই জটিল, বড় আর কঠিন শব্দবন্ধের বাক্য কেন পড়তে হবে? যার যা ইচ্ছে পড়ুক।
মিসির আলি অমনিবাস, সাইন্স ফিকশান, পেন্সিলে আঁকা পরী, হিমু সমগ্র, জোছনা ও জননীর গল্প, মেঘ বলেছে যাব যাব – অসংখ্য ভালো লাগা উপন্যাস ও স্কেস লিখেছেন ।
সহজ গল্প বলার ভঙ্গি পাঠককে তাঁর লেখার প্রতি আকৃষ্ট করে রাখে। শেষ পংক্তি পর্যন্ত টেনে নেয়।
তাঁর যাপিত জীবন নিয়ে বাজারে প্রশ্ন আছে। হুমায়ূন আহমেদের জীবনে নারীঘটিত কেলেঙ্কারির কথা আসছে। আমারতো মনে হয় এক্ষেত্রে হুমায়ূন ঠিক এবং স্বচ্ছ জীবনযাপন করেছেন। বিয়ে করেছেন, সংসার করেছেন। কোনো অনৈতিকতার পথে হাঁটেন নি। সুতরাং খারাপ লাগলে লেখককে মার্জনা করায় যায়।
তাঁর লেখক জীবনের প্রাপ্তি এই যে, তিনি দেখে যেতে পেরেছেন শতশত অষ্টাদশী রমণী হলুদ, নীল শাড়িতে ঝলমল করতে করতে এসে পংক্তিতে দাঁড়িয়ে বই কিনছে, পড়ছে। বই পড়ে কাঁদছে, হাসছে- উপভোগ করছে।
হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যে একটা বাঁক পরিবর্তনের বাঁশিওয়ালা ছিলেন। তাঁর স্টাইল বাংলা সাহিত্যে আরো কিছুদিন স্থিত হবে- এ কথা বোধ করি বলা যায়।
হুমায়ূন আহমেদ/লেখক/জন্মদিন