হাফিজুর রহমান ||
মশাগুলোর মধ্যে একটা বড়ো অংশের গুরুতর অভিযোগ, ওরা নিশ্চিন্তে বিভিন্ন ধরনের ঘরের ওয়াল কিংবা খোলা আকাশের নিচে যে কোন প্রকারের প্রাচীরে একটু আরাম করে বসে, বিশ্রাম নিতে পারে না; টিকটিকিদের অত্যাচারে। ওই সব জায়গায় মশা বসলে খুব গোপনে এসে, খপ করে ধরে টুপ করে গিলে ফেলে। এরপর টিকটিকিগুলোর পেটে গিয়ে ভয়ানক কষ্টে মৃত্যুবরণ করতে হয় মশাদের, যা স্বাভাবিক মৃত্যুর মধ্যে পড়ে না বলেই ওদের দাবী।
মশারা হয়তো মানুষকে কামড় দিয়ে কিছুটা অন্যায় করে, কিন্তু টিকটিকির তো কোন ক্ষতি করে না। তবে কেন ওরা মশাদের সাথে এই ধরনের অন্যায় করে আসছে, শতশতবছর ধরে? এই অন্যায়ের বিরুদ্ধেই আসলে তাদের আন্দোলন এবং এই আন্দোলন ঘিরে নানান রকমের পরিকল্পনা। এর একটা বিহিত হওয়া দরকার। বন্ধ করে দেয়া দরকার এই জঘন্য অন্যায় অত্যাচার। মশাদের এই অংশটি প্রতিবাদ করে আসছে দীর্ঘদিন থেকে, তবে একথাও সত্যি, জাতি-গোষ্ঠীর ভেদাভেদ ভুলে সমস্ত মশাদেরকে ঐক্যমতে নিয়ে এসে একজোট করতে পারে নাই, কিছুটা মতভেদ আছে। তাই আন্দোলনটা খুব একটা বেশীদূর এগুতে পারেনি বা এগুতে পারছে না, তবে চেষ্টা জোরেশোরে অব্যাহত আছে, হয়তো সফল হতেও পারে একদিন, সেই আশায়।
ইতিমধ্যে টিকটিকি নিধন কমিটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা অনেক চেষ্টা তকবির করে সুদুর আফ্রিকা থেকে এডিস নামক ভীষণ শক্তিশালী একধরণের মশা এনে এদেশে ব্যপক বংশবিস্তারের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া আপ্রাণ চেষ্টা করছে। যদিও রাজধানী ঢাকার বাইরে এখনও সেইভাবে সফল হতে পারে নাই। তবে চেষ্টার কোন ত্রুটি নেই। সারাদেশে এডিস মশা ছড়িয়ে পড়লে একযোগে টিকটিকি নিধন পরিকল্পনা সফলতার মুখ দেখবে, সেই উদ্দেশ্য কমিটির শীর্ষ পর্যায়ের মশাগুলো গুরত্বসহকারে কাজ করছে।
টিকটিকি আর মশা, এই দুই প্রজাতির হিংসাত্মক দ্বন্দ্বে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নিরীহ মানুষ, এডিস মশার কামড়ে নানান রকমের রোগে আক্রান্ত হয়ে কখনও কখনও কিছু মানুষের, মৃত্যুর মতোও ঘটনা ঘটছে। সুতরাং আমাদের নিজেদের সুরক্ষার দায়িত্ব আমাদেরকেই নিতে হবে। মশা ও টিকটিকির দ্বন্দ্ব দেখার সময় আমাদের নেই। যে মশার কামড়ে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি, সেই মশা ধরে যদি টিকটিকি খায়, এতে আমরা উপকৃত হলেও, টিকটিকি কিন্তু আমাদের উপকারের জন্যে মশা ধরে খায় না, খায় তাদের নিজের প্রয়োজনে পেটের ক্ষুধা নিবারনের জন্য।
আমাদেরকে সুন্দর পরিবেশে বেঁচে থাকতে হবে, সেই জন্যে আমাদের আশপাশের সবকিছু আমাদেরকেই পরিস্কার – পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। মশা, টিকটিকির দ্বন্দ্বের বিষয়ে ন্যায় – অন্যায়ের বিচার বিবেচনা বা দ্বন্দ্ব নিরসনের রাস্তা খোঁজা, এসব অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে আমাদের মাথা না ঘামালেও চলবে।
আমাদেরকে ব্যক্তিগত, দল বা সমষ্টিগতভাবে অবশ্যই সজাগ হতে হবে, মশার বংশ বিস্তারের স্থান তৈরি হতে না দেয়ার পাশাপাশি ওদের বসবাসের জায়গাগুলো ধ্বংস করে দিতে হবে, সকলের ভালো জন্যে। তবেই এসবের বিনিময়ে আমরা পাবো, একটি পরিচ্ছন্ন বাড়ি, গ্রাম, শহর, দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারব, একটি পরিচ্ছন্ন দেশের।