কাওছার আলম/
শিউলি ফুলের মতো বিষণ্ণতায় ভরা এই বর্ষায় চন্দনা তার যৌবন ফিরে পেয়েছে। উপচে পড়ছে পানি। বুক জুড়ে পুঁটি, খোলসে, চ্যাং, মাগুর, শোল, কৈ, চিংড়ি আর পুকুর ভাসা মাছেরা খেলায় মেতেছে। সৌখিন মাছ শিকারি ছিপ ফেলেছে এখানে সেখানে। ভেলায় ভেসেছে পাড়ের শৈশব। কেউ কেউ সেউতি জাল নিয়ে নেমেছে। গ্রামের দেহাতি মানুষ, নাঙ্গা শিশু সব নদীর পাড়ে! শীতকালে এই নদীই ফাঁকা শূন্যগর্ভ প্রান্তর। ইরি চাষের ধুম তখন।
দূরে রেলব্রিজ। আরও দূরে লাল সিগন্যাল, এ যেন জীবনের। এই ব্রিজেই এক অন্ধ ফকির থরথর করে কাঁপছিল, টলে গেছে তার বেঁচে থাকার বিশ্বাস। মৃত্যু তার ঘাড়ে শাস নিচ্ছিল। ট্রেন হুইসেল দিতে দিতে থেমে যায় ব্রিজটির মুখেই। নিচে পানি, স্রোত, ঘূর্ণি। দূরে বকচরা খাস জমিতে জড়াজড়ি করে ভেসে আছে শাপলা শালুক। খেলা করছে পানকৌড়ি, এক পায়ে দাঁড়িয়ে কানাবক।
সূর্য ডুবে যায়, জীবনের নানান রঙের ইঙ্গিত দিয়ে। আকাশ জুড়ে মেঘের ভেলা, পাল্লা দিয়ে উড়ছে ঘুড়ি, যেন লাল নীল দীপাবলি আকাশ জুড়ে। মেঘ না থাকলে বর্ষার আকাশ ঝকঝকে। তারারা ঝিকমিক করতে থাকে। গাছে গাছে দলবেঁধে জোনাকিরা জ্বলে।
মুখথুবড়ে পড়া জীবনে গতি আনতেই কিনা প্রতিটি বিবর্ণ বিকেল ঘুরে বেড়াই! , ১২০সিসির মটর সাইকেল নিয়ে এই অখণ্ড বিপদসংকুল অবসর আমি তাড়িয়ে বেড়াই।যে পথে যাওয়া যায়, যাই। মাঠঘাটপ্রান্তর দেখি। দোয়েলের, শালিকের গান শুনি। মাছরাঙ্গার বসে থাকা, মাছ ধরা দেখি।
লিখি রাতে। নিষুতি রাতে রিমঝিম বৃষ্টির সাথে যেন মহুয়ার ঘ্রাণ লেগে থাকে। বার বার ভুলে যাই, কী লিখেছি ! রাত শেষ হয়ে যায়। মসজিদে আযান ঘোষিত হয়। আসসালাতু খায়রুম মিনাল নউম…। আলো ফুটে উঠতে থাকে।
জীবন সত্যিই সুন্দর!