নিজস্ব প্রতিবেদক/
৬৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা মা কানন প্রভা পাল যখন করোনা আক্রান্ত হয়ে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন, তখন সাধারণ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন তার ৩৭ বছর বয়সী ছেলে শিমুলের অক্সিজেন লেভেল দ্রুত কমতে থাকে। তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হয় শিমুলের। তাকে দ্রুত আইসিইউতে নেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু হাসপাতালের ১৪টি আইসিইউ বেডের একটিও খালি নেই। এদিকে ছেলে শিমুলের ছটফটানি বাড়ছে।
এ খবর মায়ের কানে গেলে তিনি নিজের হাতে লাইফ সাপোর্টের সরঞ্জাম খুলে ছেলেকে আইসিইউতে আনতে চিকিৎসকদের ইশারা করেন। শতচেষ্টা করেও মা প্রভা পালকে বোঝাতে পারেননি চিকিৎসকেরা। বাধ্য হয়ে মাকে সরিয়ে আইসিইউ’র বেডে তোলা হয় ছেলেকে। এর কয়েক ঘণ্টা পরই তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন মা প্রভা পাল।
এদিকে, মায়ের ছেড়ে দেওয়া আইসিইউতে শুয়েও ভালো নেই ছেলে শিমুল, অবস্থার অবনতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন তিনিও।
চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানার দিদার মার্কেটের সিঅ্যান্ডবি কলোনি এলাকার বাসিন্দা মা কানন প্রভা পাল গত ১৫ জুলাই করোনা আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। এরমধ্যে তার অবস্থার অবনতি হলে গত ২২ জুলাই তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। অন্যদিকে ২১ জুলাই করোনা আক্রান্ত হয়ে একই হাসপাতালের সাধারণ ওয়ার্ডে ভতি হন ছেলে শিমুল পাল। এরমধ্যে গত বুধবার সকাল থেকে ছেলে শিমুলের তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হয়, কমতে থাকে অক্সিজেন লেভেল।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ও কোভিড ফোকাল পার্সন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আবদুর রব বলেন, ‘মায়ের অসাধারণ ত্যাগের কারণে ছেলে এখনও বেঁচে আছে। তবে মা কানন প্রভা পাল যেটা করেছেন তাতে আমাদের সায় ছিল না। এরপরও উনার জোরাজুরিতেই আমরা নিরুপায় হয়ে তাকে আইসিইউ বেড থেকে নামিয়েছি। নামানোর কয়েক ঘণ্টা পরেই তিনি মারা যান। মায়ের ছেড়ে দেওয়া সিটে ছেলে শিমুল পাল এখন আছেন। তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক।’
ডা. আবদুর রব বলেন, ‘গেল কিছুদিন ধরেই হঠাৎ রোগীর চাপ বেড়েছে কয়েকগুণ। যাদের বেশিরভাগরই অক্সিজেন প্রয়োজন হচ্ছে। যাদের শারীরিক অবস্থা খারাপ হচ্ছে, তাদের আইসিইউ’র প্রয়োজন হচ্ছে। কিন্তু শয্যা না থাকায় দিতে পারছি না। এখনও যে সংখ্যক রোগী আইসিইউতে আছে, একই সংখ্যক রোগী আইসিইউ’র জন্য অপেক্ষমাণ। বাধ্য হয়েই তাদের হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা দিয়ে অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে।’