রঙমাখা জীবন!

রুক্ষ লাল মাটির উত্তরবঙ্গে আবাস বলেই হয়তো পাহাড়, নদী আর সমুদ্র খুব হৃদয়গ্রাহী আমার কাছে। কি অপরূপা সাজে যে প্রকৃতি সাজে! বিষ্ময়েবিমূঢ় হয়ে দেখি।
বান্দরবান ছোট শহর। শঙ্খনদী ( অন্য নাম সাঙ্গু) বয়ে চলেছে পাহাড়কে পাশ কাটিয়ে। নদীর তীর ধরে নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী আর পাহাড়ি বাঙালিদের সহজ-সরল জীবন বহতা নদীর মতোই বয়ে চলেছে এখানে। জুমের ধান আর কলা, পান, আলু, বাঁশ, বেতফল – কত কত ফসল পাহাড়ের বুকে ছড়াতেছে প্রেম। বিচিত্র রঙিন পোষাকে রমনীগণ জুমে, ছড়ায়, নদীতে কেলিতে মেতেছে সহচরীদের সাথে। জীবন যে কি বিস্ময় নিয়ে চেয়ে আছে তাঁদের দিকে!
স্বর্ণমন্দির ঘিরে ভিক্ষুদের চলাচল চোখে পরে। গেরুয়া পোষাক, মুণ্ডিত মস্তকে তাঁদের সৌম্যই মনে হয়। মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজ আর বয়ে চলা নদী । দূরের বহুদূরের জুমঘর থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী মিশে যায় দিগন্ত রেখায় । আধো ঘুম আধো জাগরণ বোধ হয় তখন।
মেডিটেশনে শিথিলায়ন পর্বে কল্পনা করার কথা বলা হয়। শরীরে শিথিলতা আসার আগে কল্পনায় বারংবার সুখকর দৃশ্যের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। বোধ করি, ওখানে দাঁড়িয়ে শরীর ও মন শিথিল হতে বাধ্য। অশান্ত হৃদয়ে যেন ফুরফুরে মেজাজে বহমান থাকে। চোখে সবুজ, হৃদয়ে বিশালতার অনুভব আর বাতাসে সজীবতার নির্যাস। মন ভালো হতে বাধ্য।
ক্লান্তিকর বগালেক ভ্রমণ আর কেওক্রাডং পাহাড়ের উঠার দীপ্তপ্রত্যয় জীবনকে প্রাণিত করে; শানিত আর উদ্বুদ্ধও। পায়ে পায়ে পিছিয়ে পরে বন্ধ্যা জীবন, অসমতল মন আর বিষাক্ত ঘৃণা!
মাঝে মাঝে ভাবনা এসে নাড়া দিয়ে যায়। বাহ! জীবন কি বিস্ময়ে সাজিয়ে রাখে বয়সটাকে। আনন্দ -বেদনার কাব্যকে সাথে নিয়ে এ একবিচিত্র পথ পাড়ি দিচ্ছি আমরা; কাম-ক্রোধ- মোহের মদিরা পান করে।
বান্দরবান যাচ্ছি। এবারের সহযাত্রী প্রফেসর দেবাশিস দত্ত স্যার ও ছাত্র মাসুম হোসেন।
[জয়পুরহাট-ঢাকা-চট্রগ্রাম-বান্দরবান- রুমা-বগা লেক- কেওক্রাডং]

13 Com

ments