পদ্মাপ্রবাহ ডেস্ক : তুলসী রানী স্বপ্নে দেখেছেন বাড়িতে হাতি পালন করতে হবে। সহধর্মিণীর এমন দৈবিক স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে দিশেহারা হয়ে পড়েন কৃষক দুলাল চন্দ্র রায়। অবশেষে নিজের তিন বিঘা আবাদি জমি বিক্রি করে ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকায় কিনেছেন একটি হাতি।
এ ঘটনাটি ঘটেছে লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের নিভৃত পল্লী রতিধর দেউতি গ্রামে। শুধু হাতি নয়, স্ত্রীর দৈবিক স্বপ্ন পূরণে তাকে কিনতে হয়েছে ঘোড়া, রাজহাঁস, রাম ছাগলসহ বিভিন্ন প্রাণী। হাতি কেনার পর এই কৃষকের বাড়িতে বাড়ছে উৎসুক জনতার ভিড়।
এলাকাবাসী জানান, কৃষক দুলাল চন্দ্র রায় চার বিঘা জমিতে ফসল আবাদ করে সংসার চালাতেন। সংসারে স্ত্রী তুলসী রানী ও দুই সন্তান। ২০ বছর আগে কৃষক দুলালের সঙ্গে বিয়ে হয় তুলসীর। স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা থেকেই তার স্বপ্ন পূরণে আবাদি জমি বিক্রির হাতি কিনেছেন তিনি। হাতিটি পরিচালনার জন্য মাসিক ১৫ হাজার টাকা বেতনে একজন মাহুতকেও রাখতে হয়েছে।
গ্রামের বাসিন্দা নরেন্দ্র চন্দ্র বর্মণ (৮৫) বলেন, ‘আগে হাতি দেখেছি জমিদার বাড়িতে। জমিদার হাতিতে চড়তেন। কিন্তু জীবনের প্রথম কোনো কৃষকের বাড়িতে হাতি দেখছি। হাতি পালন করা কঠিন কাজ। জানি না দুলাল কেমন করে এই কাজ করলো।’
কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার নাজিম খাঁ এলাকা থেকে হাতি দেখতে আসা আতোয়ার রহমান (৫৫) বলেন, ‘হাতির খবর শুনে দেখতে এসেছি। কৃষকের বাড়িতে হাতি বাঁধা, এটা সত্যিই বিরল দৃশ্য। জানি না স্ত্রীর ভালোবাসায় অন্ধ কৃষক দুলাল চন্দ্র কতদিন হাতি পুষতে পারবেন। তবে স্ত্রীর প্রতি তার যে ভালোবাসা, সেটা আজকের যুগে দৃষ্টান্তই বটে।’
কৃষক দুলাল চন্দ্র রায় (৪৬) বলেন, ‘শুধু হাতি না। স্ত্রীর দৈবিক স্বপ্ন পূরণ করতে ঘোড়া, রাজহাঁস, রাম ছাগলসহ নানা প্রাণী কিনতে হয়েছে। বাড়িতে রাখা এসব প্রাণীর নিয়মিত পূজা ও সেবা করে তুলসী। দৈবিক স্বপ্নে পাওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী সে এসব প্রাণীর সেবা ও পূজা করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত কয়েকবছর ধরে তুলসী দৈবিক স্বপ্ন পেয়ে নিজ বাড়িতে পূজারী হয়ে উঠে। বাড়িতেই স্থাপন করা হয়েছে কয়েকটি মন্দির। স্ত্রীর দৈবিক স্বপ্ন পূরণে চেষ্টা করেছি আমি। এখন হাতির খাবার আর মাহুতের বেতন যোগান দিতে আমাকে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। তবুও স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা থেকে আমি প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
কৃষক দুলাল চন্দ্রের স্ত্রী তুলসী রানী বলেন, ‘বাড়িতে থাকা প্রাণীগুলোর নিয়মিত সেবা ও পূজা করি। ঈশ্বরই আমাদের ও প্রাণীগুলোর খাবার যোগান দিবেন। আমরা সকলেই এক সঙ্গে ভালো থাকবো।’
পটুয়াখালী থেকে আসা হাতির মাহুত শরিফুল ইসলাম জানান, তিনি ১৫ হাজার টাকা মাসিক বেতনে এখানে এসেছেন। থাকা ও খাওয়া মালিকপক্ষের দায়িত্ব। গ্রামের দুই যুবককে হাতি পরিচালনায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া শেষ হলেই তিনি চলে যাবেন।