জাফর আহমদ/
কৃষকের জন্য সরকারঘোষিত প্রণোদনার অর্থ বিতরণ শুরু করেনি রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের জনতা ব্যাংকসহ ছয় ব্যাংক। এসব ব্যাংকর জন্য সরকারের বরাদ্দ করা টাকা পড়ে আছে। অন্যদিকে ৩৭টি ব্যাংক বিতরণ করেছে এক হাজার ১১৪ কোটি টাকা। যাতে উপকৃত হয়েছেন ৪৬ হাজার ৮১৫ জন। ব্যাংকগুলোর আগস্ট প্রান্তিকের প্রতিবেদন থেকে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
করোনাভাইরাস মহামারী কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হন। গবাদিপশু পালন থেকে শুরু করে পোলট্রি খামার ও হ্যাচারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে দুধ, ডিম ও মাছ উৎপাদন করেও দাম পায়নি কৃষক। করোনা মহামারীর কারণে একই সময়ে সারা দেশে ছুটি ঘোষিত হয়। দেশে বন্ধ হয়ে যায় উৎপাদন বিপণন, যোগাযোগসহ সব কিছু। এ সময় সরকার কৃষিকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়। যাতে সব কিছু বন্ধ থাকলেও যাতে খাদ্যের কোনো সমস্যা না হয়। এজন্য সরকার কৃষকের মধ্যে প্রণোদনা ঘোষণার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর পরপরই সরকারের পক্ষ থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিতরণের জন্য কৃষক পর্যায়ে বিতরণযোগ্য ঋণের সুদহার হবে চার শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, পাঁচ হাজার কোটি টাকার ঘোষিত এ তহবিল পুনঃঅর্থায়ন ঋণ হিসেবে বিতরণ করা হবে। কৃষক পর্যায়ে চার শতাংশ হারে বিতরণ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ক্লেইম করলে বাংলাদেশ ব্যাংক উল্লেখিত টাকার সঙ্গে এক শতাংশ হারে বাড়তি টাকাসহ ওই ব্যাংককে সরবরাহ করবে। কৃষকের কাছ থেকে নেওয়া চার শতাংশ হারে সুদের সঙ্গে এক শতাংশ সরকারের কাছ থেকে পাওয়ার ফলে প্রণোদনা বিতরণে অপারেটিং চার্জ হিসেবে ৫ শতাংশ প্রাপ্ত হয়। এ ঋণ বিতরণের জন্য ৮ রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকসহ মোট ৪৩টি ব্যাংক মনোনীত হয়। এসব ব্যাংককে বিভিন্ন পরিমাণ টাকাও বরাদ্দ করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, আগস্ট মাস পর্যন্ত ৪৬ হাজার ৮১৫ জন কৃষকের মধ্যে এক হাজার ১১৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়। চুক্তি করলেও রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকসহ বেসরকারি খাতের বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, সীমান্ত ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক কোনো ঋণ বিতরণ শুরুই করেনি। এসব ব্যাংকের বিতরণের জন্য যথাক্রমে ১২০ কোটি টাকা, সাত কোটি টাকা, দুই কোটি টাকা, ৬২ কোটি টাকা, এক কোটি টাকা ও ২২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত এসব ব্যাংকের প্রণোদনা বিতরণের খাতা শূন্য।
অন্যদিকে সাতটি বাণিজ্যিক ব্যাংক বরাদ্দের ৩০ শতাংশের বেশি ঋণ বিতরণ করেছে। ৩০ শতাংশের বেশি বিতরণ করা ব্যাংকগুলো হলোÑরূপালী ব্যাংক বরাদ্দের ৫৭ শতাংশ বা ৩০ কোটি টাকা বিতরণ করেছে; কৃষি ব্যাংক বিতরণ করেছে বরাদ্দের ৫১ শতাংশ বা ৬২০ কোটি টাকা; এক্সিম ব্যাংক বরাদ্দের ৬০ শতাংশ বা ৭৬ কোটি টাকা বিতরণ করেছে; মার্কেন্টাইল ব্যাংক ৩০ শতাংশ বা ২১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা বিতরণ করেছে, ডাচ বাংলা ব্যাংক বরাদ্দের ৩০ শতাংশ বা ২৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা বিতরণ করেছে এবং দ্য সিটি ব্যাংক বরাদ্দের ৩২ শতাংশ বা ১৭ কোটি টাকা বিতরণ করেছে। বাকি ৩১টি ব্যাংক প্রণোদনা বিতরণ শুরু করলেও আশানুরূপ নয়।
যেসব ব্যাংক কৃষি খাতের প্রণোদনা বিতরণ শুরুই করেনি, কেন তারা কৃষি খাতে প্রণোদনা বিতরণ শুরু করেনি, কারণ জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো উত্তর দেয়নি এসব ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, করোনা মোকাবিলায় সরকার বিভিন্ন খাতের জন্য প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। ওইসব প্রণোদনার প্রায় পুরোটাই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অর্থ থেকে বিতরণ করতে বলা হয়েছে।
এক্ষেত্রে সরকার সুদ কমাতে শুধু সহায়তা দিচ্ছে। কিন্তু কৃষি খাতে প্রণোদনার টাকা দেওয়া হচ্ছে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে। এমনকি সুদহার যাতে বেশি না হয়, এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে এক শতাংশ হারে সুদের টাকাও দিচ্ছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো শুধু বিতরণ করে ক্লেইম করলেই বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা দিয়ে দেবে। এরপরও কৃষি খাতে প্রণোদনা বিতরণে আগ্রহ না দেখানো খুবই দুঃখজনক।