হাঁটতে ভালো লাগে।রাতবিরাতে ক্যাম্পাসে, বিনোদপুরে, কাজলায় কিংবা শহরে যায়। তখন আমি সদ্য সাবেক হয়ে যাওয়া ছাত্র। এম এ পরীক্ষার রেজাল্ট তখনও হয়নি। দীর্ঘ সময় কাটানো শান্ত শহর রাজশাহী ছেড়ে যেতে হচ্ছে ইট-পাথরের মায়াহীন শহরে। সেখানে মোড়ে মোড়ে ভীড়। গায়ে গা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে মানুষ কিংবা অমানুষ। বিচিত্র সব হাবভাব। সুখ আছে, সুখ নেই চেহারা তাদের। হয়ত কারো কারো লুকানো স্বপ্নটা বুক পকেটে সযত্নে ভাজ করে রাখা। তারপরও ফিরতি পথে তাদের বিস্তর তাড়া।
এখানে বিচিত্র এক সৌজন্যবোধ কাজ করে কন্টাক্টরদের।তারা বাসে টেনে তোলে। নামার সময় নামেন বলে চলন্ত গাড়ি থেকে ধাক্কা দেয়। মাঝে মাঝে মনে করিয়ে দেয় ‘ডান পা’।ধুলোর পুরো স্তর জমে যায় শার্টে। ভাড়া নিতে এসে যাত্রীদের সাথে তার তর্কবির্তক করে। ড্রাইভারকে নির্দেশ দেয়- উস্তাদ ডাইনে প্লাস্টিক, বাইয়ে লন।এরই মাঝে কারো কারো পকেট হাওয়া। দু-এক মিনিট হা-হুতাশ করে চুপসে যায় ফাটা বেলুনের মতো। জানালার পাশে বসা মধ্য বয়সী নারী তার কানে হাত দিয়ে সারাটাপথ কাঁদলো। কানের দুল গেছে তার, সাথে কানের লতি। মানুষের বিচিত্র কষ্টের খোঁজ আমি পাই। মূলত মানুষের খোঁজ পাই।
বাস ভালো লাগে না। তাই সখের হাঁটা তখন অভ্যাসে পরিণত হচ্ছে। ভালোও লাগছে। এমনিতে হাঁটার খুব প্রয়োজনও নেই। তবে হাঁটি, হাঁটতে ভালো লাগে তখন। হাঁটতে হাঁটতে ভাবি, এই শহর- এখান থেকেই মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলা হয়। স্বপ্ন আর স্বপ্নভঙ্গের কাব্য লেখা হয় এই শহরে। এখানে বসেই পুঁজির খেলা হয়। একদিন কবি বিপন্ন বাউলার সাথে দেখা। তাঁর গল্প করল-‘ যখন ঢাকায় আসি তখন কি বিবর্ণ সময় কাটিয়েছি! মাইলের পর মাইল হেঁটেছি।’ সেই থেকে হাঁটা শুরু।…