বিশেষ প্রতিনিধি/
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্ত দিয়ে রাতের অন্ধকারে অবৈধভাবে বাংলাদেশে ঢুকছে ভারতীয় গরু-মহিষ। ফলে বিপুল পরিমান রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের প্রায় মাসখানেক পেরিয়ে গেলেও অদৃশ্য কারনে চালু হয়নি বৈধ বিট দিয়ে করিডোরের মাধ্যমে গরু আমদানি। যা দ্রুত চালুর দাবি বৈধ গরু ব্যবসায়ীদের।
গত ১৬ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবছরের জন্য সারাদেশের ৯ জেলার ১৭টি বিট/খাটালের অনুমোদন দেয়। যার মধ্যে ১টি নতুন ও ৪টি পুরাতন মিলে চাঁপাইনবাবগঞ্জেই অনুমোদনকৃত বিট/খাটালের সংখ্যা ৫টি। শুধুমাত্র চাঁপাইনবাবগঞ্জ ছাড়া সারাদেশের ১২টি বিট অনুমোদনের পরই বৈধপথে গরু-মহিষ আমদানি শুরু করে।
কিন্তু চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫টি বিটে অদৃশ্য কারনে অনুমোদনের ১ মাস ৮দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও শুরু হয়নি বৈধপথে ভারতীয় গরু আমদানি। যার ফলে, রাতের অন্ধকারে অবৈধ পথে গরু আনছেন কিছু ব্যবসায়ী। এতে বেড়েছে, মাদকের পাচার, সীমান্তে হত্যা ও অপরাধের পরিমাণ। অভিযোগ রয়েছে, অবৈধ পথে আসা এসব গরুকে স্থানীয় বিজিবি দেশী গরু বলে লিখিত ক্লিয়ারেন্স দিলে আশেপাশের হাটে কম দামে এসব গরু বিক্রি হচ্ছে। এসব গরু তত্তিপুর, খাসেরহাট ও মনাকষা হাটেই বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে। এতে নায্য দাম না পেয়ে বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন স্থানীয় খামারিরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে সরকার অনুমোদিত বিট/খাটাল ৫টি। শিবগঞ্জ উপজেলার মানোহরপুর বিওপি, মাসুদপুর বিওপি, রঘুনাথপুর বিওপি এবং সদর উপজেলার বাগচর বিওপি ও জোহরপুর ট্যাক বিওপি খাটাল।
এসব বৈধ বিট/খাটাল দিয়ে গরু-মহিষের জন্য সরকারকে রাজস্ব দেয়া হয় ৫০০ টাকা। সে হিসেবে এই ৫টি খাটাল থেকে মৌসুমে কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এ সুযোগে চোরাইপথে প্রতিদিন দেশের অভ্যন্তরে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী নিয়ে আসছে শত শত গবাদিপশু।
শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের মানোহরপুর, মাসুদপুর ও রঘুনাথপুর বিওপি দিয়ে রাতের আঁধারে গরু আনছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। ফলে বৈধ খাটালের রাখালরা বেকার হয়ে পড়েছেন।
মনোহরপুরের রাখাল লিটন, ব্যবসায়ী বাইরুল, আব্দুল মান্নান, তারাপুরের সেলিম, হঠাৎপাড়ার শরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের গবাদিপশুর বৈধ ব্যবসা বন্ধ থাকলেও এক শ্রেণির চোরাকারবারীরা রাতের আঁধারে চোরাইপথে ভারত থেকে নিয়ে আসছে শত শত গরু-মহিষ। রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত চলে অবৈধ পথে গরু আমদানির কার্যক্রম।
দালালরা তাদের ব্যক্তি স্বার্থে গবাদিপশু আনতে ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশ করার কারণেই সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। বেড়েছে গরু ছিনতাইসহ নানা অপরাধের সংখ্যা। রবিবার মনাকষা ইউনিয়নের তারাপুর-হঠাৎপাড়ায় সমির মেম্বারের গলিতে রাতের আঁধারে আসা গরুকে ছিনতাই করা নিয়ে একটি সালিশ হয়। সেই সালিশের অডিও রেকর্ড রয়েছে প্রতিবেদকের কাছে।
অভিযোগ রয়েছে, অবৈধভাবে আসা এসব গরুকে বাড়িতে পোষা দেশী গরু হিসেবে ক্লিয়ারেন্স দেয় মানোহরপুর, মাসুদপুর ও রঘুনাথপুর বিওপি ক্যাম্পের বিজিবি। এতে প্রত্যেক জোড়া গরুর জন্য ১৫ হাজার করে টাকা তোলে চোরাকারবারিরা। যা ভাগবাটোয়ারা করে অবৈধ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। অবৈধপথে গরু-মহিষ আমদানি সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দেয়, শিবগঞ্জ উপজেলার উজিরপুরের ক্যানেল আলী।
তথ্য রয়েছে, ২০১৮ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর একান্ত সচিব হারুন-অর-রশীদের সাক্ষর জাল করে দুই মাস নিজের নামে খাটাল চালায় ক্যানেল। সেই সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদটি প্রকাশও হয়।
বর্তমানে মানোহারপুর, মাসুদপুর ও রঘুনাথপুর বিওপি এলাকায় অবৈধ পথে আসা গরুর ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে ক্যানেল। মাদক ও চোরাকারবারী হিসেবে পরিচিত ক্যানেলের সহযোগী হিসেবে মনোহরপুর বিওপিতে রয়েছে ঝড়ু, শামীম, জুয়েল, শরীফ ও জাব্বার।
অন্যদিকে মাসুদপুর ক্যাম্প এলাকার দায়িত্ব পালন করে আমানুল্লাহ, বাসেদ, কাইয়ুম এবং রঘুনাথপুর এলাকায় অবৈধ গরু আমদানির দেখভাল করে মজিবুর ও কাজেম।
এনিয়ে মানোহরপুর বিওপি ক্যাম্পের কোম্পানি কোমান্ডারকে ফোন দিলে তার অবর্তমানে নায়েক মুজাহিদ বলেন, এই এলাকায় বিজিবি নিরবিচ্ছিন্ন ও কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করছে। রাতের অন্ধকারে ভারতীয় গরু-মহিষ আসার বিষয়ে আমরা কিছু জানি না।
এ সময় তিনি অবৈধভাবে আসা গরুকে দেশী গরু হিসেবে বিজিবি’র ক্লিয়ারেন্স দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। এবিষয়ে ৫৩ বিজিবি ব্যাটলিয়নের অধিনায়কের সরকারি নম্বরে ফোন দিলে বন্ধ পাওয়া যায়।
মুঠোফোনে জেলা প্রশাসক এ জেড এম নূরুল হক জানান, অবৈধ পথে কেউ গরু-মহিষ নিয়ে আসলে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।