পদ্মাপ্রবাহ ডেস্ক/
কক্সবাজারের চকরিয়ায় ‘গরু চুরির অপরাধে’ বয়স্ক মা ও তরুণী দুই মেয়েকে রশিতে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের ঘটনায় উপজেলার হারবাং ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৩০ জনের বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) বিকালে নির্যাতিত পারভিন বেগম বাদী হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেছেন। মামলার বাদী হারবাং ইউপি চেয়ারম্যান মিনারুল ইসলামের বিরুদ্ধে তাদেরকে মারধরের অভিযোগ এনেছেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন-উত্তর হারবাং বিন্দারবান খিলের জিয়াবুল হকের ছেলে নাছির উদ্দিন(২৮), মাহবুবুল হকের ছেলে নজরুল ইসলাম (১৯) ও এমরান হোসেনের ছেলে জসিম উদ্দিন (৩২)। এ তিনজনকে সোমবার পুলিশ আটক করেছে।
মামলার বাদী চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার মৃত আবুল কালামের স্ত্রী পারভিন বেগম তার দায়ের করা মামলায় উল্লেখ করেছেন, তারা রাঙ্গনিয়া পৌরসভার স্থায়ী বাসিন্দা হলেও বর্তমানে তারা সপরিবারে পটিয়া উপজেলার শান্তির হাট কুসুমপুরের একটি ভাড়া বাসায় বাস করেন। ওই ভাড়াবাসা থেকে গত ২১ আগস্ট দুপুরে পারভিন বেগম, তার ছেলে এমরান, ছেলের বন্ধু ছুট্টু এবং দুই মেয়ে রোজিনা আক্তার ও সেলিনা আক্তার শেলীকে নিয়ে চকরিয়া উপজেলার হায়দার নাশি এলাকায় ছোট মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হন। তারা প্রথমে মাইক্রোবাস যোগে সাতকানিয়ার কেরানি হাটে আসেন। তারপর সেখান থেকে একটি সিএনজি চালিত বেবি ট্যাক্সি করে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে দক্ষিণ দিকে চকরিয়ার ডুলাহাজারার পূর্ব পাশে হায়দারনাশিস্থ ছোট মেয়ের শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে আবারও রওনা দেন। তারা সিএনজি বেবি ট্যাক্সি করে চকরিয়ার হারবাং লাল ব্রিজ নামক এলাকায় পৌঁছালে পেছন থেকে দুইটি মোটরসাইকেল নিয়ে ৬ জন লোক তাদেরকে ধাওয়া দিতে দেখেন। এতে সিএনজি চালক ভয় পেয়ে সিএনজি চালিয়ে হারবাং পহর চাঁদা এলাকায় নির্মাণাধীন রেল লাইনের পাশে নিয়ে যায়। সেখানে ওই মোটরসাইকেল আরোহীরা তাদেরকে আটক করে কিল ঘুষি মারতে থাকে। এ সময় ওই অভিযুক্তরা তাদের কাছ থেকে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার, মোবাইল ফোন সেট কেড়ে নিয়ে নেয়। এরপর তাদেরকে কোমরে রশি বেঁধে মারতে মারতে রাস্তায় হাঁটিয়ে হারবাং ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যায়।
মামলার বাদী আরও উল্লেখ করেছেন, ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে ইউপি চেয়ারম্যান মিনারুল ইসলাম তাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে প্রথমে পারভিন বেগমের মেয়ে সেলিনা আক্তার শেলীকে তলপেটে লাথি মারেন। এরপর চেয়ার দিয়ে মারতে থাকেন। একপর্যায়ে তার হাতে থাকা লাঠি দিয়েও আঘাত করেন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে ইউনিয়ন পরিষদের পাশের হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে উদ্ধার করে তাদেরকে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান।
পারভিন বেগম আরও উল্লেখ করেন, গরু চুরির ঘটনা মিথ্যা ও অপবাদ। তাদেরকে গরু চুরির অপবাদ দিয়ে মারধর করে কোমরে রশি বেঁধে প্রকাশ্যে রাস্তায় হাঁটিয়ে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে। যা চরমভাবে মানহানিকর। এটি পূর্ব পরিকল্পিত।
এদিকে, মামলার আসামিদের মধ্যে পুলিশ গত ২৪ আগস্ট ভোর রাতে নাছির উদ্দিন (২৮), নজরুল ইসলাম (১৯) ও জসিম উদ্দিনকে (৩২) গ্রেফতার করেছে। তাদেরকে ওই দিনই চকরিয়া সিনিয়র জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চালান দেওয়া হলে আদালতের বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট রাজিব কুমার দেব শুনানি শেষে তাদেরকে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
চকরিয়া থানার ওসি মো. হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, মামলা রুজু করা হয়েছে। তারা এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
চকরিয়ার হারবাং ইউপি চেয়ারম্যান মিনারুল ইসলাম দাবি করেছেন, তিনি এ ঘটনার সময় চট্টগ্রামে ছিলেন। তবে তিনি মা-মেয়েকে কোমরে রশি বেঁধে নির্যাতনের ঘটনা মোবাইল ফোনে জানতে পেরে গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে তাদেরকে জনতার কবল থেকে উদ্ধার করে পুলিশে সোপর্দ করার জন্য সহযোগিতা করেছেন।
পারিভিন বেগম ও তার দুই মেয়ে জামিনে মুক্তি পেয়ে ২৫ আগস্ট বিকালে চকরিয়া থানায় উপস্থিত হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেছেন। মামলা বাদী পারভিন বেগমের আইনজীবী ইলিয়াছ আরিফ জানান, এ মামলাটি রুজু হওয়ার সাথে সাথে পুলিশ চাইলে আসামিদের গ্রেফতার করতে পারবেন। (ইত্তেফাক)