পদ্মাপ্রবাহ ডেস্ক/
মহামারির মধ্যে দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজে তাবলিগ জামাতের সমাবেশে যোগ দিয়ে করোনাভাইরাস ছড়ানোর অভিযোগে ২৯ বিদেশি নাগরিকের বিরুদ্ধে দায়ের করা একটি মামলা খারিজ করে দিয়েছে ভারতের মুম্বাই উচ্চ আদালত। গত শুক্রবার (২১ আগস্ট) আদালতের আওরঙ্গবাদ বেঞ্চ তাদের পর্যবেক্ষণে বলেছে, রাজনৈতিক সরকার এসব বিদেশিদের বলির পাঁঠা বানিয়েছে। সম্প্রচারমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের তাবলিগ জামাতের একটি আয়োজন গত ১ মার্চ দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজ মসজিদে শুরু হয়। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব ও কিরগিজস্তানের প্রতিনিধিসহ প্রায় দুই হাজার মানুষ ওই আয়োজনে অংশ নেয়। ১৫ মার্চ পর্যন্ত অনুষ্ঠান চলে। অনুষ্ঠান শেষেও অনেকে সেখানে অবস্থান চালিয়ে যেতে থাকে। ২৪ মার্চ ভারতজুড়ে লকডাউন শুরুর সময়েও সেখানে প্রায় দেড় হাজার মানুষের অবস্থান ছিল।
ওই আয়োজনে অংশ নেওয়া বা তাদের সংস্পর্শে আসা অনেক বিদেশি ও ভারতীয় নাগরিকের করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হয়। পরে এটিকেই ভারতের সবচেয়ে বড় ক্লাস্টার সংক্রমণ বলে অভিহিত করা হয়। করোনাভাইরাস ছড়ানোর অভিযোগে ভারতের বিভিন্ন স্থানে তাবলিগ জামাতের ওই আয়োজনে অংশ নেওয়া অনেকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। মহারাষ্ট্রে দায়ের হয় ২৯ জন বিদেশি তাবলিগ জামাত সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা।
ওই মামলা খারিজ করে দিয়ে মুম্বাই উচ্চ আদালতের রায়ে বলা হয়, ‘দিল্লির মারকাজে যোগ দেওয়া বিদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় বড় ধরণের প্রচারণা চালানো হয় আর এমন একটি পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করা হয় যেন ভারতে কোভিড-১৯ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য দায়ী এসব বিদেশিরা। এসব বিদেশিদের বিরুদ্ধে ভার্চুয়াল নিপীড়ন চালানো হয়েছে।’
আদালতের রায়ে আরও বলা হয়, ‘কোনও মহামারি কিংবা বিপর্যয় হলে একটি রাজনৈতিক সরকার বলির পাঁঠা খোঁজার চেষ্টা করে আর পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে যে, এই বিদেশিদের সম্ভবত বলির পাঁঠা হিসেবে বেছে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছে।’
ওই ২৯ বিদেশি নাগরিকের বিরুদ্ধে ভারতীয় পেনাল কোড, মহামারি নিয়ন্ত্রণ আইন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন ও বিদেশি নাগরিক সংক্রান্ত বিভিন্ন আইনের একাধিক ধারা ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়। তবে তাদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগই খারিজ করে দিয়েছে আদালত।
আদালতের রায়ে বলা হয়, এসব বিদেশি নাগরিকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে তাদের যে ক্ষতি সাধন করা হয়েছে তা নিরসনে ইতিবাচক ব্যবস্থা নেওয়ার এটাই ভালো সুযোগ। আদালত বলেছে, এসব বিদেশি নাগরিক যে ধর্মীয় স্থান ভ্রমণ করেছেন সেটি কোনও নিষিদ্ধ এলাকা নয়।
আদালতের রায়ে আরও বলা হয়, ‘কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে আমাদের আরও ধৈর্য্য, এবং অতিথিদের সঙ্গে আরও বেশি স্পর্শকাতরতা দেখানোর প্রয়োজন ছিল, বিশেষ করে এই আবেদনকারীদের মতো অতিথিদের সঙ্গে। তাদের সাহায্য করার পরিবর্তে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ভ্রমণ শর্ত ভঙ্গ এবং করোনাভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ বানিয়ে জেলে পুরেছি।’ (বাংলা ট্রিবিউন)